Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

কমিউনিটি ক্লিনিকের তালিকা
ক্রমিক নং কমিউনিটি ক্লিনিকের নাম   গ্রাম              মোবাইল নং
০১               রায়টা নতুন পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক রায়টা            01726 865381
০২  মাধবপুর কমিউনিটি ক্লিনিক মাধবপুর            01833 657769
০৩      মসলেমপুর কমিউনিটি ক্লিনিক মসলেমপুর             01748 902014

 

গ্রামীণ জনপদের অসহায় দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চাঁদপুরেও রয়েছে এমন দুই শতাধিক ক্লিনিক। এখান থেকে বিনামূল্যে শুধু স্বাস্থ্যসেবাই নয়, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে সুবিধা বঞ্চিত মানুষেরা সহজেই স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। 

স্থানীয়রা জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক হবার কারণে এখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়ে যান তারা যার কারণে দূরদূরান্তে ছুটতে হয় না। এতে বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই সুবিধা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে এখন ১৩ হাজার ৪৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এসব ক্লিনিক থেকে মাসে গড়ে ৯৫ লাখ মানুষ বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নেয়। কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হওয়ার পর থেকে উপজেলা হাসপাতালে রোগীর চাপ কমেছে।

আমাদের দেশে অন্য অনেক কিছুর মতো কমিউনিটি ক্লিনিকের এই উদ্যোগও রাজনীতির ফেড়ে পড়েছিল। তবে মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ কতটা কাজে লেগেছে, তার একটা চিত্র পাওয়া যায় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: হেলথ রেভল্যুশন ইন বাংলাদেশ’ (কমিউনিটি ক্লিনিক: বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বিপ্লব) শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে। সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই যৌথ প্রতিবেদেন ২০১৩ সালের ১২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের কিছু ছাপা হয়েছিল। সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে তিনি তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধারণা ও চিন্তার সম্প্রসারণ করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তাঁর চিন্তা ও পরিকল্পনাগুলো আমি তাঁর কাছ থেকে শুনতাম। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায়, এ নিয়ে তাঁর ভাবনাগুলো তিনি আমাকে বলতেন। পরে ওই চিন্তাভাবনাগুলোই আমি আরও বিস্তৃত করেছি। ’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটি কঠিন। বিভিন্ন সময় নানা দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আলমাআটাতে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ‘২০০০ সালের মধ্যে সকলের জন্য স্বাস্থ্য’—এই বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা হয়। এরপর থেকে অনেক দেশে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার নানা উদ্যোগ নেওয়া হতে থাকে।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ মানুষের জন্য একটি করে মোট ১৩ হাজার ৫০০ ক্লিনিক তৈরির পরিকল্পনা ছিল। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ক্লিনিকের নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং ৮ হাজার ক্লিনিক চালু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। শত শত কমিউনিটি ক্লিনিক পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। যদিও বিএনপির একাধিক নেতা বিভিন্ন সময় বলেছেন, বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করেনি।

এরপরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার (২০০৭-০৮) কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কীভাবে চালু করা যায়, তার একটি উদ্যোগ নেয়। এনজিওগুলোকে দিয়ে ক্লিনিকগুলো চালানো যায় কি না, এমনও ভাবা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ স্বাস্থ্য খাতের অগ্রাধিকার বিবেচনায় কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।

‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ নামের প্রকল্পের আওতায় ক্লিনিকগুলো মেরামত, নতুন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং ওষুধ সরবরাহ করার মাধ্যমে ক্লিনিকগুলো চালু করা হয়।

কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে সরকারের সর্বনিম্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো। এখান থেকে স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা দেওয়া হয়। এখান থেকে বিনা মূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পায় মানুষ। শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিন সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ক্লিনিক খোলা থাকে। ক্লিনিক পরিচালনা করেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। এই পদে স্থানীয় নারী কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাঁকে সহায়তা করেন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী। অনেকেই বলেন বা লিখেও থাকেন যে অমুক কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে কোনো চিকিৎসক দেখা যায়নি। বাস্তবে এতে চিকিৎসকের কোনো পদ নেই।

কমিউনিটি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সর্বেশষ তথ্যে বলা হচ্ছে, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাগ্রহীতার ভিজিট সংখ্যা ৬১ কোটি ৫০ লাখ, ক্লিনিক থেকে জরুরি ও জটিল রোগী রেফারের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৮ হাজার, স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩০৯টি, গর্ভবতী মায়ের প্রসব পূর্ববর্তী সেবা (এএনসি) ২৩ লাখ ৮৬ হাজার ২০৪টি, প্রসব-পরবর্তী সেবা (পিএনসি) ৮ লাখ ১১ হাজার ৬৬৩টি। এই বিপুল সেবা গ্রামের দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ পেয়েছে বিনা মূল্যে।


দেশব্যাপী সরকারের এই উদ্যোগ কতটুকু কার্যকর, যাদের জন্য এই উদ্যোগ তারা সন্তুষ্ট কি না, তা নিয়ে একাধিক মূল্যায়ন হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ২০১৩ সালে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৮২ শতাংশ এলাকাবাসী সেবা নেয়। ক্লিনিকগুলো বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় এবং বিনা মূল্যে ওষুধ পাওয়া যায় বলে মানুষ এখানে সেবা নিতে আগ্রহী। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (নিপোর্ট) জরিপে দেখা যায়, বাড়ির পাশের ক্লিনিক থেকে বিনা মূল্যে ওষুধ ও পরামর্শ পেয়ে ৮০ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট। জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) জরিপ বলছে, সেবা নিয়ে ৯৮ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট।


সিংহভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় কোনো ব্যক্তির জমিতে গড়ে উঠেছে। এর পরিচালনায় স্থানীয় মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত। সরকারি বেতনভুক যে তিনজন এখানে সেবা দেন, তাঁদের অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট এলাকার। তাই কমিউনিটি ক্লিনিককে সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রতিষ্ঠান বলে মনে করে। সাধারণ অসুখে আগে যারা চিকিৎসকের কাছে যেতে না, এখন তারা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসে।


ইউনিয়ন সাবসেন্টার, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলা/ সদর হাসপাতাল—এ রকম একটি প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যকাঠামোর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এতে মাঠপর্যায়ে কিছু টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। আবার ক্লিনিক কার্যক্রম চলছে প্রকল্পের আওতায়। ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর বেতন হয় রাজস্ব খাত থেকে, কিন্তু সিএইচসিপির বেতন হয় প্রকল্প থেকে। এ নিয়ে সিএইচসিপিদের মধ্যে অসন্তোষ আছে।


২০১৭ সালের শুরু থেকে ‘কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার’ নামের কর্মপরিকল্পনার (ওপি) আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে। কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক আবুল হাসেম খান ব্যাখ্যা করে বললেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজের পরিধি বাড়ছে। এখন প্রায় ১ হাজার ২০০ ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে, প্রতিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগ এখান থেকে শনাক্ত করা হবে।


স্বাস্থ্যসম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্য তুলে ধরা হয়। বিশ্বসম্প্রদায়েরও কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যাপারে আগ্রহ আছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক বাংলাদেশ সফরের সময় গ্রামে গিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখেছিলেন।


বিনা মূল্যে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা বা ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া গ্রামের মানুষের জন্য কম পাওয়া নয়। গ্রামের মানুষদের নিয়ে গঠিত কমিটি চালায় কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় গ্রামপর্যায়ে স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণের এই ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে একটি মডেল, বড় সাফল্যের দৃষ্টান্ত।